ডায়াশঙ্খ

‘জয় ডায়াশঙ্খ’, বলে কপালে ঠেকিয়ে ছোট্ট শিশিটি নেপাল এগিয়ে ধরল খেদি মানে মালতির দিকে মালতি নাম হলেও এ নামে কেউ ওকে ডাকে না চেনেও না সবাই ডাকে খেদি বলে মালতি নামটা নিজেও ভুলে গেছে খেদি বোঁচা খ্যাঁদা নাক তাই ছোটবেলায় সবাই ডাকত খেদি বলে সেই থেকে এখনও সবার কাছে ওর নাম খেদি জল ভরা ছোট শিশিটা হাতে নিয়ে খেদি বলল,

–ও বাবা, ডায়াশঙ্খের প্রতি এত ভক্তি! প্রণাম করে দিলি! দেখা যাক, তোর ডায়াশঙ্খের কেরামতি

নেপাল বলল– ভক্তি হবে না? এ কি যে-সে জল নাকি? এ হলো ডায়াশঙ্খের জল এর মাহাত্ম্য কত জানিস?

— দেখব দেখব দু-একদিনের মধ্যেই তো বোঝা যাবে তোর ডায়াশঙ্খের কেরামতি বুজরুকি করেই তো জীবনটা প্রায় পার করে দিলি কত কী করেছিস এখন ধরেছিস ডায়াশঙ্খ

— বিশ্বাস না করলে কিছু ফল পাওয়া যাবে না গৌরমোহনদা বার বার বলে দিয়েছে বিশ্বাস করে কপালে ঠেকিয়ে চরণামৃতর মতো খেলে তবেই ফল মিলবে কত লোক এসে দশ টাকা দিয়ে ডায়াশঙ্খের জল নিয়ে যায় তোকে তো ফ্রিতে দিলাম

বেলা বেশ গড়িয়েছে মাছের বাজার প্রায় ফাঁকা বাজারের ভেতর একটা চায়ের দোকানে চা ঘুঘনি খেতে খেতে কথা বলছিল ওরা

খেদি, নেপাল দুজনেই বাজারে মাছ কাটে মাছ বাজারে টিনের শেডের নীচে লম্বা একফালি উঁচু সিমেন্ট বাঁধানো জায়গায় পরপর মাছের দোকান নানা রকম মাছের মধ্যে কোনও কোনও দোকানি বড় বড় মাছ কেটে বিক্রি করে কাটা মাছ বিক্রির পাশাপাশি দুটো দোকান দোকান দুটোর পেছন দিকটায় দুই দোকানের জন্য মাছ কাটে খেদি ও নেপাল সাধারণ ক্রেতারাও ওদের দিয়ে মাছ কাটায় দু’জনের মধ্যে রয়েছে বেশ সখ্য ভাব অনেক সময় একজনের বরাদ্দ মাছ অন্য জন কেটে দেয় দু’জনেই প্রায় চল্লিশের কোঠায় সমবয়সি মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হলেও তার স্থায়িত্ব থাকে না খেদি বিবাহিতা বিয়ের এক বছর না পেরোতেই স্বামী অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে ভেগে গেছে সন্তান নেই স্বামী কেটে পড়ার পর খেদির পেশা এখন বাজারে মাছ কাটা নেপালের একটা পা খোঁড়া একটা বাঁশের লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটে খোঁড়া বা ল্যাংড়া বললে ক্ষেপে যায় তেড়ে আসে খেদিও মাঝে মাঝে খোঁড়া বলে ডাকে খেদির ওপর রাগ করে না নেপাল তবে মাঝে মাঝে অভিমান করে বলে– তুইও খোঁড়া বললি মুখ কালো করে নেপাল কখনও পাল্টা বলে– তুইও তো নাক-খ্যাঁদা মুটি খেদি রাগ বা অভিমান করে না হেসে বলে– মুটি তো ভাল তোর মতো পাটকাটি হব নাকি? পানের কৌটো থেকে একটা হাতে বানানো ছোট পান নেপালের দিকে এগিয়ে ধরে বলে– নে, ধর রোজ বাড়ি থেকে একটা চ্যাপ্টা টিনের কৌটোয় গুন্ডি চুন সুপারি দিয়ে পান নিয়ে বাজারে আসে খেদি নেপাল মাঝেমাঝে নিজেও বলে– একটা পান দে তো মুখটা শুকিয়ে গেছে

পান এগিয়ে খেদি হয়তো বলে– আজ চারটে পান খেয়ে নিলি দুপুরে চায়ের পয়সা তুই দিবি

নেপাল ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেয় বেলা অনেকটা গড়ালে দু’জনেই একসঙ্গে বাজার থেকে বেরিয়ে যে যার আস্তানার দিকে রওনা দেয়

খেদি থাকে জলপাইগুড়ি শহর ছাড়িয়ে সেবাগ্রামের আগে ৭৩ মোড়ের কাছে সেখানে এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ভোরবেলা সে বাড়ির কিছু কাজ সেরে চলে আসে বাজারে দুপুরে বাজার থেকে ফিরে স্নান খাওয়ার পর আবার কিছু কাজ সন্ধ্যার পর তার বিশ্রাম বাড়ির মালিকের ভাঙা লোহা লক্কড় বেচাকেনার ব্যবসা বাড়ির সঙ্গেই দোকান মালিকটা মাঝ বয়স পার করে এসেছে দেখতে অসম্ভব কালো থলথলে মাংসল চেহারা গামলার মতো মস্ত ভূঁড়ি লোকটা সবসময় চেককাটা নীল রঙা লুঙ্গি স্যান্ডো গেঞ্জি পরে থাকে জর্দা দেওয়া পান চিবোয় পাশে বসলে জর্দার গন্ধ পাওয়া যায় পানে ঠোঁট দুটো থাকে টকটকে লাল খেদি মনে মনে বলে, ঠোঁট তো নয়, যেন তামাকের কালো টিকার মধ্যে আগুন জ্বলছে লোকটা দাপুটে মানুষ সারাদিন ফেরিওয়ালা বাড়ি বাড়ি ঘুরে লোহা লক্কড় ভাঙাচোরা ফেলনা জিনিস কিনে এনে লোকটার দোকানে বিক্রি করে তাদের সঙ্গে লোকটার চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই থাকে দোকানের পিছনের গুদামঘরটা ভাঙাচোরা জিনিসে ভরে গেলে একটা লোক এসে সেগুলো ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যায় কলকাতা কী হয় সেগুলো দিয়ে খেদি অত জানে না লোকটার ছোট ছোট দুই ছেলে এক মেয়ে স্কুলে পড়ে লোকটার বউয়ের কোমর থেকে দুটো পা পক্ষাঘাতে অসাড় সবসময়ে শুয়ে থাকে রোগাপটকা চেহারা মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে জল গড়ায় বিশেষ কথা বলে না বউটার জন্য মায়া হয় খেদির। তার জন্য কিছু শুশ্রূষাও করতে হয় খেদিকে। যেমন স্নান করিয়ে দেওয়া, জামাকাপড় পাল্টে দেওয়া ইত্যাদি। মাঝে মাঝে বউটা কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে খেদির দিকে। রাগ রাগ নাকি হিংসা মাখা চোখ খেদি ঠিক বুঝতে পারে না। তবে অস্বস্তি হয়। বউটার চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয় খেদি। মালিক লোকটা সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত দোকানে থাকে শুধু দুপুরে স্নান খাওয়ার সময় বাড়িতে আসে ছেলেমেয়েগুলো সারাদিন কী করছে খোঁজ রাখে না সকালে রান্নার একমাসি এসে দু’বেলার রান্না করে দিয়ে যায় বাড়ির বাকি কাজ সামলায় খেদি রোজ রাতে খাওয়ার পর মালিক লোকটা খেদির ঘরে আসে খেদির শরীরটাকে নিয়ে ধামসায় লোকটার মুখ থেকে তখন ভুরভুর করে দেশি মদের গন্ধ বেরোয় নিজের শরীরটাকে চটকাতে দিতে আপত্তি করে না খেদি ওর নিজের শরীরেও তো খিদে আছে ভাবে মন্দ কী! থাকা-খাওয়া সব ফ্রি মাস মায়না ৮০০ টাকা রাতে মালিকটাকে একটু গদর দেওয়া এজন্য মালিক দেয় আরও ২০০ এর ওপর বাজারে মাছ কাটার নগদ আয় তো আছেই এই হলো খেদির দিবারাত্রির রোজনামচা

নেপালকে বাজারে অনেকে ন্যাপলা বলে ডাকে খেদিও তাকে প্রায় সবসময় ন্যাপলাই বলে নেপালের জন্য মাঝে মাঝে কষ্ট হয় খেদির খোঁড়া মানুষ একার সংসার ওকে দেখার তিনকুলে কেউ নেই বাজারে মাছ কেটে কত আর আয় হয় সকাল থেকে দুপুর মাছ বাজারে দু’জনের একসঙ্গে কাটে কত কথা হয় দু’জনেই দু’জনের সবকিছু জানে খেদির রোজনামচার সবকিছু ন্যাপলা জানলেও জানে না মালিক লোকটার রোজ রাতে ওর শরীরটাকে চটকানোর কথা নেপালের খুব পছন্দ খেদিকে একদিন খেদিকে একটা নতুন ম্যাক্সি কিনে দিয়েছিল একদিন লাল রঙা একটা ব্লাউজ ব্লাউজটা হাতে নিয়ে খেদি বলেছিল, 

–কী ব্যাপার, হঠাৎ আমার জন্য নতুন ব্লাউজ? কাউকে দিবি বলে কিনেছিলি নাকি? সে হয়তো নেয়নি তাই আমাকে দিচ্ছিস

— মাইরি না তোর জন্যই কিনেছি

— আমার জন্য? তোর মতলবটা কী বল তো? একটা ব্লাউজ দিয়ে পটিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাস নাকি? আমার বিয়ের ভাবনা ভাবিস না একদম তোর মতো খোঁড়াকে আমি বিয়ে করতে যাব কোন দুঃখে? বিয়ে করার শখ হয়ে থাকলে একটা লেংড়ি না হয় কানি মেয়েকে জুটিয়ে বিয়ে কর

নেপালের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছিল ওভাবে বলার জন্য খেদিরও মনটা একটু খারাপ হয়েছিল বলেছিল, 

— চল, আজ চায়ের পয়সা আমি দেব

নেপাল কিন্তু একদিন সরাসরি খেদিকে বিয়ের ইচ্ছের কথা বলেছিল

— আমরা দু’জনে তো সকাল থেকে দুপুর একসঙ্গেই থাকি বিয়ে করে তো একসঙ্গেই দু’জনে থাকতে পারি তাহলে তোকে পরের বাড়ি ঝিগিরি করতে হয় না ওখানে থাকতেও হবে না আমার সঙ্গেই থাকবি বেশ আবেগমাখা গলায় বলেছিল নেপাল ঝাঁটার বাড়ি মারার গলায় খেদি বলেছিল,

— তোর সঙ্গে থাকলে খাওয়াতে পারবি?ও, আমার মাছ কাটা পয়সায় সংসার করার ফন্দি এঁটেছিস? খোঁড়ার পেটে পেটে কুমতলব তো কম নেই আর কোনও দিন এসব বললে মুখে নোড়ার বাড়ি মারব

খেদির ঝাঁঝালো মেজাজ শুনে চুপসে গিয়েছিল নেপাল অমনটা বললেও খেদি নিজে কিন্তু মনে মনে নেপালকে নিয়ে ভাবে ও জানে ন্যাপলা ওকে চায়, ভালবাসে নেপালের প্রতি করুণা থাকলেও ভেতরে ভেতরে কি ওর প্রতি একটুও ভালবাসা নেই খেদির? ভেবেছে খেদি ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে হিসেবও কষেছে ন্যাপলার সঙ্গে ঘর বাঁধলে একটা দুটো ছানাপোনা হবে তখন বাজারে মাছ কাটা বন্ধ ন্যাপলার একা মাছ কাটার আয়ে তখন সংসার চলবে না কাজেই কাজ নেই খোঁড়ার সঙ্গে বিয়ের ঝঞ্ঝাটে জড়ানোর তার চেয়ে যেমন আছে সেই ভাল মালিক লোকটার বাড়িতে থাকা খাওয়া সব ফ্রি রাতে লোকটার শরীরের চাহিদা মেটাতে হয় এতে খেদির নিজের শরীরের চাহিদাও মিটে যায় শরীরটা পাওয়ার জন্য মালিকটা খেদিকে বেশ পছন্দও করে খেদি মনে মনে হিসেব কষে দেখেছে সে বেশ ভালই আছে দরকার কি খোঁড়ার সঙ্গে ভেড়ার এসব হিসেব কষলেও ন্যাপলাকে পছন্দকরে খেদি ভাবে আহা খোঁড়া মানুষ বিয়ের এবং মেয়ে মানুষের চাহিদা তো ওরও হতেই পারে খোঁড়া মানুষেরও তো সাধ-আহ্লাদ থাকতেই পারে কিন্তু ন্যাপলার কোনও হিল্লে করার ক্ষমতা তো নেই খেদির তবে একটু ভাল সম্পর্ক রাখলে ক্ষতি কি? মাছ কাটার সময়টাও ভাল কাটে

মালিকের ছোট ছেলেটার দিন সাতেক হল খুব জ্বর চার নম্বর গুমটি থেকে অনিল ডাক্তারের ওষুধ এনে খাওয়ানো হচ্ছে কিন্তু জ্বর কমছে না খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসে রাতে খেদির শরীর পিষতে পিষতে মালিক বলেছিল– শালা অনিল ডাক্তার পয়সা খাচ্ছে আর আজেবাজে ওষুধ দিচ্ছে আসলে জ্বর কমলে ডাক্তারের পয়সা খাওয়া বন্ধ হবে তাই আজেবাজে ওষুধ দিচ্ছে শালা আটশো টাকা বেরিয়ে গেল ডাক্তার ওষুধে‘ খেদির হঠাৎ মনে হয়েছিল ডায়াশঙ্খর কথা কথাটা দু’দিন ধরে শুনছিল ন্যাপলার মুখে ডায়াশঙ্খের জল চরণামৃতের মতো খেলে নাকি অসুখবিসুখ বাপ বাপ করে পালায় সব রকম সমস্যারও সমাধান নাকি করে দিতে পারে ডায়াশঙ্খের জল রাতে শোবার সময় এবং ভোরবেলা খালি পেটে চরণামৃতের পরিমাণে ভক্তিভরে ডায়াশঙ্খের জল খেলেই নাকি উপকার মেলে শরীরে কচলানি খেতে খেতে খেদি মালিককে বলেছিল কথাটা 

— কাল নিয়ে আসিস দেখব তোর ডায়াশঙ্খের জল খাইয়ে তুকতাকে কত কিছু তো হয় ন্যাপলার কাছ থেকে ছোট এক শিশি ডায়াশঙ্খের জল এনে মালিককে দিয়েছিল খেদি

নেপাল থাকে রায়কত পাড়ার শেষ মাথা ওয়াকারগঞ্জের মুখে ছোট বস্তি সেখানে একবাড়িতে পাশাপাশি চারটে ঘর বাঁশের বেড়া কাঠ টিনের জোড়াতালি দেওয়া ঘর এর একটা ঘরে থাকে নেপাল নেপালের ঘর থেকে একটু দূরে মোড়ের মাথায় একটা ছোট শিবমন্দির মন্দিরের পূজারী মালিক গৌরমোহন রায় মন্দির লাগোয়া তার বাড়ি মন্দিরের দুশো টাকা মাইনের পার্ট টাইম কর্মী নেপাল সকাল সন্ধ্যায় মন্দির মোছা এবং সন্ধ্যারতির সময় দড়ি টেনে টেনে ঝুলন্ত ঘণ্টা বাজানা এটাই মন্দিরের কাজ নেপালের সকালে মাছ কাটতে যাওয়ার আগে মন্দির মুছে পরিষ্কার করে বাজারে চলে যায় নেপাল সন্ধ্যায় আবার আসে মন্দিরে ঘণ্টা বাজানার পর আবার মুছে দেয় মন্দিরের মেঝে কাজ শেষ হলেও রাত প্রায় ন’টা পর্যন্ত মন্দিরেই থাকে নেপাল সন্ধ্যা আরতির পর অনেকে মন্দিরে আসে ডায়াশঙ্খের জল নিতে ছোট হোমিওপ্যাথ এক শিশি জল দশ টাকা সাধারণ শঙ্খ শুইয়ে রাখলে শঙ্খের খোলা দিকটি থাকে বাঁদিকে কিন্তু ডায়া বা দক্ষিণা শঙ্খের খোলা দিক থাকে ডান দিকে গৌরমোহনের কাছ থেকে নেপাল শুনেছে এই শঙ্খ পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কায় কিন্তু ডায়াশঙ্খ মেলে পণ্ডিচেরিতেও দাম নাকি দুই থেকে তিন হাজার টাকা ডায়াশঙ্খের জল খেয়ে অনেকে নাকি উপকার পান রোগব্যাধির উপশম হয় অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয় ডায়াশঙ্খের জলের কারবারে ভাল আয় গৌরমোহনের রোজই প্রায় দশবিশ জন লোক আসে জল নিতে গৌরমোহন একটু ছোট নীচু টুলের ওপর পেতলের থালায় রাখে শঙ্খটি লালশালুর ধুতি, কপালে চন্দনের ফোঁটা নিয়ে শঙ্খের সামনে বসে থাকে গৌরমোহন ভক্তরা জল নিয়ে ভক্তিভরে শঙ্খকে প্রণাম করে যায় মন্দির বন্ধের পর গৌরমোহন যত্ন করে শঙ্খটি লালশালুতে জড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যায়

গৌরমোহনের কাছে এমন ডায়াশঙ্খ ছিল আরো একটি। নেপালের খুব ইচ্ছে ছিল সেটি নেওয়ার। কিন্তু গৌরমোহন আড়াই হাজারের নিচে শঙ্খটি বিক্রি করতে রাজি ছিল না। নেপাল অপেক্ষা করছিলো কবে হাতে পাবে সেই ডায়াশঙ্খটি। পাঁচশো টাকা জমিয়েছিল। যে দোকানির মাছ কাটে তার থেকে দু’হাজার টাকা ধার নিয়ে গৌরমোহনের কাছ থেকে শঙ্খটি পেয়েছে নেপাল। লাল শালু দিয়ে জড়িয়ে যত্ন করে রেখেছিলো শঙ্খটি। হাতে পাওয়ার পরদিনই খেদিকে বলেছিল নেপাল এবার তার কপাল খুলে যাবে খেদি বলেছিল–কেন রে, আলাদিনের প্রদীপ পেয়েছিস নাকি?

— না রে, তার চেয়েও বড় জিনিস পেয়েছি

নেপাল খেদিকে বলেছিল শঙ্খটি পাওয়ার কথা বলেছিল, 

— এখন দেখবি আমার কাছেও ভক্তরা আসবে ডায়াশঙ্খের জল নিতে শিশিপ্রতি দশটাকা দাম

শুনে মুখ ঝামটা দিয়ে খেদি বলেছিল, 

— কত কিছু করল খোঁড়া এখন বাবাজীবন হওয়ার শখ বুজরুকিতে ঠকে পুরো টাকাটা জলে ফেললি

বাধা দিয়ে নেপাল বলল– বুজরুকি নয় রে সত্যি মাহাত্ম্য আছে ডায়াশঙ্খের নইলে এত লোকে পয়সা দিয়ে জল কেনে কেন দেখবি ডায়াশঙ্খের দয়ায় এবার আমারও কপাল খুলে যাবে গৌরমোহনদা অবশ্য বলে দিয়েছে আমি যেন মন্দিরের আশেপাশে কাউকে ডায়াশঙ্খের জল দেওয়ার চেষ্টা না করি

সব শুনে খেদি মুখ ভেংচে বলেছিল– আহম্মদক

দু’দিন পর খেদির শরীরটা কচলানোর সময় মালিকটা বলেছিল ছেলের জ্বর না সারার কথা খেদি তখন মালিকটাকে ডায়াশঙ্খের জলের কথা বলেছিল মনে মনে ভেবেছিল, ন্যাপলাটাকে গালমন্দ করলেও থাকতেও তো পারে ডায়াশঙ্খের কিছু মাহাত্ম্য তাবিজ মাদুলি এসবে তো ফল দেয়ই মালিকও তেমনটাই ভেবে বলেছিল,– আনিস তো ডায়াশঙ্খের এক শিশি জল অনিল ডাক্তারের ওষুধে তো কিছু হচ্ছে না তুকতাকে যদি কোনও উপকার হয়

পরদিন ন্যাপলার থেকে এক শিশি ডায়াশঙ্খের জল এনে খেদি দিয়েছিল মালিকের হাতে আশ্চর্য ব্যাপার চারবার চরণামৃতের মতো ডায়াশঙ্খের জল খেতেই দু’দিনে মালিকের ছেলের জ্বর উধাও বিস্মিত মালিক খেদির কাছ থেকে ন্যাপলার খুঁটিনাটি বৃত্তান্ত জেনে নেয় 

মালিক লোকটা হিসেবি ব্যবসায়ী ভাঙা লোহা লক্কড় ফেলনা জিনিসের কারপার করে ভাল টাকা করেছে ডায়াশঙ্খের মাহাত্ম্য দেখে তার মাথায় ঘুরঘুর করতে থাকে এক ফন্দি তার বাড়ির কাছে পাঙার দিকে যাওয়ার রাস্তার ধারে মালিকের একটা ছোট সবজি বাগান আছে বাগানে রাস্তার ধারে রয়েছে একটা বড় বটগাছ তার পাশে বাগানের পাহারাদারের থাকার জন্য টিনের চালের পাকা একটা ঘর ঘরের সামনে রয়েছে ছোট বারান্দা ঘরের বিজলিবাতি আছে এই বারান্দাটা পরিষ্কার করে এখানে ন্যাপলাকে ডায়াশঙ্খ দিয়ে বসিয়ে দিলে বেশ হয় ডায়াশঙ্খের জলের মাহাত্ম্যের কথা একটু প্রচার হলে শিশিপ্রতি দশ টাকা দরে ভাল বিক্রি হবে ডায়াশঙ্খের জল ন্যাপলার সঙ্গে আধাআধি বখরায় ডায়াশঙ্কের জলের ভাল কারবার হতে পারে মালিকের বিক্রিবাট্টা তো দিনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মালিক ওই বারা্ন্দার পাশে একটা চেয়ারে বসে ডায়াশঙ্খের জল বিক্রির হিসেব রাখতে পারে মালিক নিজে উপস্থিত থাকলে ন্যাপলা ব্যাটা আধাআধি বখরা এদিক ওদিক করতে পারবে না প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিক্রি হবে ডায়াশঙ্খের জল কারবারে বিনিয়োগ সামান্য একটা ছোট টুল ন্যাপলার জন্য লালশালুর দুটো ধুতি টুলের ওপর ডায়াশঙ্খ রাখার জন্য একটা ছোট্ট পেতলের থালা একটা ছোট লোহার ত্রিশূলও রাখতে হবে বটগাছের গোড়ায় পুঁতে বটগাছ ঘেঁষা বারান্দায় টুলের সামনে আসনে বসে থাকবে নেপাল পরনে লালশালুর ধুতি কপালে বড় লাল সিঁদুরের টিপ গলায় রুদ্রাক্ষের মালা জ্বলবে ধূপকাঠি প্রদীপ টুলের পাশে থাকবে আরও দুটি পেতলের থালা একটায় থাকবে কিছু ফল আর একটা থাকবে প্রণামীর পয়সা ফেলার জন্য থাকবে জলভরা একটা তামার টাটযারা ডায়াশঙ্খকে প্রণাম করবে এবং শিশির জল কিনবে তাদের হাতে কুশি দিয়ে তামার টাট থেকে চরণামৃতের মতো দেওয়া হবে জল নেপালের বাঁ-পাশে সাজানো থাকবে ডায়াশঙ্খের জল ভরা সব হোমিওপ্যাথি মাপের শিশি নেপালকে বলতে হবে চুলদাড়ি কাটা চলবে না মুখ ভরা থাকবে দাড়ি মাথার চুল থাকবে কাঁধের নীচ পর্যন্ত ভাব এই রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়ে খুব পাঙা, হুতবাগান, কুকুরজান, গড়ালবাড়ি, চাউলহাটি, ক্যাম্পের হাট ইত্যাদি জায়গায় বহু লোক এই রাস্তা দিয়ে সকালে যায় শহরে নানারকম কায়িক শ্রমের কাজে সন্ধ্যার পর তারা ঘরে ফেরে ওইসব এলাকা থেকে বহু রিক্সাচালকও শহরে যায় রিক্সা চালাতে সন্ধ্যার পর থেকে তারাও দলে দলে এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে এদের জন্য রোজ সন্ধ্যায় পাঙায় বসে বড় বাজার সারাদিন বাজারে কোনও দোকান বসে না সন্ধ্যার পর বাজার জমজমাট সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার পথে সকলে এখানে বাজার করে এদের মধ্যে ডায়াশঙ্খের মাহাত্ম্য একটু প্রচার করতে পারলেই হু হু করে বাড়বে ডায়াশঙ্খের জলের ব্যবসা খেদির মালিক এসব ভাবনা নিখুঁতভাবে ভেবে রাখে একদিন খেদির সঙ্গে নেপাল এলে মালিক তাকে সমস্ত প্রস্তাবটি শুনিয়ে দেয় নেপাল রাজি হয়ে যায় এমন কারবারের অংশীদার হতে

মাস ছয়েক হল চলছে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ৭৩ মোড়ের কাছে নেপালের ডায়াশঙ্খের জলের কারবার চলছে রমরমিয়ে কেমন করে যেন এলাকায় নেপালের পরিচিতি হয়ে গেছে ডায়াশঙ্খ ঠাকুর নামে এখন আর দারোয়ানের বারান্দায় ডায়াশঙ্খ নিয়ে বসে না নেপাল খেদির মালিক মাস তিনেক আগে তার সবজি বাগানের বট গাছটার পাশে বানিয়ে দিয়েছে ছোট একটা তিন দিক খোলা পাকা মন্দির লোকে বলে ডায়াশঙ্খের মন্দির মন্দিরের ছাদে চারকোণা চূড়া মন্দির লাগোয়া পেছনে একটা ঘর সেটায় এখন থাকে নেপাল এখন আর সকালে বাজারে মাছ কাটাতেও যায় না নেপাল সন্ধে হতেই মন্দিরে এসে বসে সামনে টুলের ওপর পেতলের থালায় রাখা থাকে ডায়াশঙ্খ প্রতিদিন চামর ধূপ বাতি প্রদীপ পঞ্চপ্রদীপ জ্বলন্ত কর্পূর দিয়ে ডায়াশঙ্খের সামনে আরতি করে নেপাল আরতির সময় বাঁ হাতে বাজাতে থাকে ঘণ্টা পরনে লাল শালুর ধুতি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ মুখ ভরা দাড়ি কাঁধ পর্যন্ত চুল সন্ধ্যা আরতির সময় জড়ো হয় প্রচুর ভক্ত টুপটাপ এক টাকা, দু’টাকা পড়তে থাকে প্রণামীর থালায় প্রতিদিন থালা প্রায় ভরে যায় কুশি দিয়ে তামার টাট থেকে নেপাল ভক্তদের হাতে দেয় ডায়াশঙ্খ ধোয়া জল তারপর শুরু হয় ডায়াশঙ্খের জল বিক্রি এক একজনের এক একরকম সমস্যা অসুখবিসুখ তো আছেই থাকে পারিবারিক থেকে আর্থিক নানা সমস্যা প্রত্যেকের সব সমস্যা মন দিয়ে শোনে ডায়াশঙ্খ ঠাকুর নেপাল তারপর এক একটা জলভরা ছোট ছোট হোমিওপ্যাথি শিশি নিয়ে ডায়াশঙ্খের গায়ে ছুঁইয়ে শঙ্খের চারদিকে ঘুরিয়ে তুলে দেয় ভক্তদের হাতে মাঝে মাঝে নেপাল চেঁচিয়ে বলে, ‘জয় ডায়াশঙ্খ’ সমস্বরে ভক্তরা ধুয়ো তোলে কেউ কেউ ডায়াশঙ্খ ঠাকুরের পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করে তাদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে ডায়াশঙ্খ ঠাকুর সন্ধে থেকে রাত প্রায় ন’টা -সাড়ে ন’টা পর্যন্ত মন্দিরের সামনে থাকে জমাটি ভিড় এলাকাটির পরিচিতি হয়ে গেছে ডায়াশঙ্খ মন্দির বলে

খেদির সঙ্গে নেপালের দেখা হয় এখন খুব কম কথাবার্তা আরও কম খেদি মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় মন্দিরে যায় দূর থেকে দেখে ন্যাপলাকে যেন অচেনা ন্যাপলা মন্দিরের পাশে একটা চেয়ারে বসে থাকে খেদির মালিক সেও বলে দিয়েছে, খেদি যেন আগের মতো নেপালের সঙ্গে মেলামেশা না করে, কথাবার্তা না বলে এলাকার সকলেই জানে খেদি বাড়ির ঝি তার সঙ্গে মাখামাখি দেখলে নেপালের ডায়াশঙ্খ ঠাকুরের গুরুত্ব খাটো হবে তবুও মন্দির বন্ধের সময় হঠাৎ হঠাৎ কোনওদিন নেপালের সঙ্গে কথা বলে খেদি তখন ওদের দিকে ভুরু কুঁচকে চেয়ে থাকে নেপালের মালিক নেপালও যেন আগেরমতো খেদির সঙ্গে আর কথা বলতে চায় না হাজার হোক সে এখন এলাকার ডায়াশঙ্খ ঠাকুর

খেদি ভুলতে পারে না ন্যাপলাকে মনে এসেই যায় ন্যাপলার কথা ডায়াশঙ্খের কী মাহাত্ম্য জানে না খেদি কিন্তু এটা মনে মনে স্বীকার করে যে, ডায়াশঙ্খের দৌলতে ন্যাপলার কপাল ফিরেছে ভাল হিল্লে হয়ে গেছে ন্যাপলাটার খেদির কোনও পরিবর্তন হল না হওয়ার কোনও লক্ষণও নেই সেই রোজ ভোরে উঠে মালিকের ঘরদোর পরিষ্কার করে বাজারে গিয়ে মাছ কাটা দুপুরের পর মালিকের বাড়ি ফিরে আবার ঝিগিরি করা রাতে শুয়ে মালিককে গতর দেওয়া খেদি মাঝে মাঝে ভাবে এভাবেই কি তার চলবে? কতদিন? জানে না খেদি হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় ন্যাপলা একদিন তাকে বিয়ে করার কথা বলেছিল মুখে ঝাঁটা মারার মতো করে ফিরিয়েছিল ন্যাপলাকে তখন যদি জানতে পারত একদিন এভাবে কপাল ফিরবে ন্যাপালাটার এখন মাঝে মাঝে মনে হয় ন্যাপলাকে গিয়ে বলে ওকে বিয়ে করার কথা কিন্তু ন্যাপলাকে বিয়ে করলে মালিক ওদের দু’জনকেই জ্যান্ত কবর দেবে কারণ ঝিকে বিয়ে করে তো এলাকায় আর ডায়াশঙ্খ ঠাকুর হয়ে থাকতে পারবে না ন্যাপলা মালিকের ডায়শঙ্খ জলের ব্যবসাটাও লাটে উঠবে রোজ রাতে খেদির শরীরটাকে ভোগ করার সুখও হারাবে হারামি মালিকটা কি তখন ওদের ছাড়বে? ন্যাপলাকের বিয়ে করলে এখান থেকে কোথাও পালিয়ে যেতে হবে দু’জনকে কোথায় যাবে? নতুন কোথাও গিয়ে ডায়াশঙ্খের ব্যবসা কি সহজে শুরু করা যাবে? জমবে কি নতুন জায়গায় ব্যবসা? একটা মন্দির টন্দিরও তো চাই চাই মাথা গোঁজার ঠাঁই খেদি ভেবে দেখেছে কাজটা সহজ নয় মাঝ থেকে ন্যাপলা বেচারার সুখের জীবন ভেস্তে যেতে পারে সেটা ঠিক হবে না সেটা হবে ন্যাপলার প্রতি মস্ত অবিচার কাজেই ন্যাপলাকে বিয়ে করে সংসার করার কথা না ভাবাই ভাল এমনটা মনে মনে ঠিক করলেও খেদির মনে এসেই যায় ন্যাপলার ভাবনা বিশেষ করে রাতে মালিকটা যখন খেদির শরীরটাকে চটকায় তখন মনে আসে ন্যাপলার কথা মনে ভাসে মালিকের বউয়ের চোখের হিমশীতল চাহনিও

নেপালও ভাবে খেদির কথা এক সময় খেদিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল খাওয়াবে কী বলে ন্যাপলাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল এখন ন্যাপলার ভাল কামাই খেদিকে নিয়ে ঘর করতে পারে তবে অনেকগুলি কিন্তু এসে মাথায় ভিড় করে এলাকার বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে এখন আলাপ পরিচয় হয়েছে ন্যাপলার তাদের সঙ্গে কথাবার্তাও হয় নানা বিষয়ে খেদির মালিককে নিয়েও কথা হয় লোকটা চশমখোর সেটা ন্যাপলাও বোঝে ডায়াশঙ্খ দিয়ে কামাই করে ন্যাপলা আর লোকটা রোজ আধা বখরা নিয়ে যায় তাছাড়া লোকটার চরিত্রও নাকি ভাল নয় বাড়ির ঝি খেদির সঙ্গে নাকি লটরটপটর আছে ন্যাপলাও এখন ব্যাপারটা সন্দেহ করে মালিক লোকটার এঁটো খেদিকে কি বিয়ে করা উচিত? আবার ভাবে হোক এঁটো খেদির তো আগেও একটা বিয়ে হয়েছিল মালিকটার সঙ্গে লটরপটর না থাকলেও খেদিতো পরের এঁটোই তখনও তো খেদিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল ন্যাপলা কিন্তু এলাকার সকলেই জানে খেদি বাড়ির ঝি একটা ঝিকে বিয়ে করলে নেপালের পক্ষে এখানে তো ডায়াশঙ্খ বাবা হয়ে থাকা যাবে না ডায়াশঙ্খের কারবারটাও আর এখানে করা চলবে না তাছাড়া খেদিকে নিয়ে এখানে থাকতে গেলে মালিকটাও প্রতিশোধ নেবে দু’জনকেই এখান থেকে তাড়িয়ে দেবে তখন যাবে কোথায় সঙ্গে খেদি থাকলে মুশকিল হবে আরও বেশি শুধু ডায়াশঙ্খের ভরসায় কোথাও গিয়ে নতুন করে কারবার ফাঁদা কঠিন কোথায় পাবে এমন মন্দির এমন সাজানো কারবার তখন হয়তো খেদিই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে নইলে ন্যাপলাকে ছেড়ে মালিকটার মতো একজনকে জুটিয়ে ভেগে যাবে সবদিক থেকেই খেদিকে বিয়ে করার অনেক ঝুঁকি তবুও খেদিকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে না ন্যাপলা ভাবতেই থাকে খেদিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অতল তলে তলিয়ে যায় ন্যাপলা তবু কূল পায় না রাত বেশ হয়ে যায় নির্জন মন্দিরের সামনের জলচৌকির ওপর রাখা ডায়াশঙ্খের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ভেবেই চলে ন্যাপলা

                                                                                               অঙ্কন: রৌনক পাত্র

শনিবারের চিঠি, শারদ সংখ্যা ১৪২১

লেখাটি পুনর্মুদ্রিত হল